বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর প্রথম ক্রিকেট দল হিসাবে মাঠে নামতে "ছয়" বছর সময় লেগেছিলো। ১৯৭৭ সালের ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলেন ।
তিন দিনের একটি ম্যাচ খেলেন "ইংল্যান্ডের" একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে। ঐ ম্যাচটি আয়োজিত হয় মূলত বাংলাদেশের সামর্থ্য যাচাইয়ের জন্য। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ গ্রহণের যোগ্য কি না তা পরীক্ষা করে দেখতেই ঐ খেলা। ঐ ম্যাচে ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত "বাংলাদেশের" প্রতিপক্ষ ছিলো লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী একটি ক্লাব "মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব বা এমসিসি"।
এমসিসি ক্লাবটির এখন আর কোন টিম নেই তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সাথে ক্রিকেটের আইন-কানুন নিয়ে এই এমসিসি এখনও আলোচনা করে থাকে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের অন্যতম ক্রিকেটার ছিলেন শফিকুল হক হীরা। যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এবং ম্যানেজারের দায়িত্বও পালন করেন।
তার স্মৃতিচারণে উঠে আসে ৪০ বছর আগে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের কথা, "মূল প্রশ্ন ছিলো আমাদেরকে সহযোগী সদস্য করবে কি করবে না। কারণ আমরা পূর্ব পাকিস্তান ছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের পর দুই বছর এবং শেখ মুজিবুর রহমান মারা যাবার পর বেশ ক'দিন ক্রিকেট বন্ধ ছিলো।" তিনি বলেন, "ফুটবল তখন তুঙ্গে ছিলো, সবাই ছিলো ক্রিকেটের বিরুদ্ধে। লোকের ঝোঁক ছিলো ফুটবলের দিকে। ক্রিকেটকে মনে করা হতো বনেদী খেলা, তাই অনেকেই ক্রিকেটের বিরুদ্ধে ছিলেন।"
"সবাই ভাবতো পাকিস্তান ভালো ক্রিকেট খেলতো, কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশও যে ভালো ক্রিকেট খেলতো সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ছিলো না।" সেই দলে আরো ছিলেন রকিবুল হাসান, জালাল আহমেদ চৌধুরী, ফারুক আহমেদ, সৈয়দ আশরাফুল হক, দিপু রায় চৌধুরী, অধিনায়ক ছিলেন শামীম কবির।
শফিকুল হক হীরা বলেন, "আমরা খুব উত্তেজিত ছিলাম। ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী এমসিসি খেলবে। এই খেলার ওপর নির্ভর করতো যে আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সদস্য হবো কি না।" তিনি বলেন, "দল নির্বাচনে একটু সমস্যা ছিলো। আমরা ছিলাম জ্যেষ্ঠ। আমাদের কিছু সুপারিশ ছিলো। তবে পরবর্তীতে সবাই আলোচনা করে দল নিয়ে একমত হন।"
তিনদিনের এই ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র হয়েছিলো। বিশ্লেষক ও ক্রিকেটাররা বলছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই ম্যাচের তাৎপর্য অনেক। শফিকুল হক হীরা মনে করেন, বাংলাদেশের সহযোগী সদস্য হওয়া থেকে শুরু করে টেস্ট খেলার মর্যাদা পাওয়া পর্যন্ত এই ক্রিকেট ম্যাচের একটা প্রভাব ছিলো।