পাগলা পুরে ছিল এক পন্ডিত। সেই পন্ডিত শিষ্যের বাড়ি যাবে বলে একদিন রেডি হচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় বালিরাজ নামের এক ছেলে এসে পন্ডিতের পা ধরে বসে পড়ল। আর বলতে লাগলঃ পন্ডিত মসাই ! আমায় আপনার শিষ্য করে নেন। পন্ডিত বললেনঃ ঠিক আছে। চল আরেক শিষ্যের বাড়ি হতে খাবার খেয়ে আসি। পন্ডিত ও শিষ্য দুজনে হেটে রওয়ানা হলেন। সমস্তদিন হেটে ক্লান্ত হয়ে পন্ডিত বললেনঃ বাপু বালিরাজ, আমি এই বটগাছে নিচে একটু বসি রই, ততোখনে তুমি ঐ যে রাস্তার ঐ পাড়ের বাজার থেকে কিছু খাবার নিয়ে আস দেকি। বালিরাজ বললোঃ ঠিক আছে পন্ডিত মশাই। বাজারে কাছাকাছি একটা তিন মাথাওলা রাস্তা। ঐ রাস্তার মাঝে একটা মরা খুলি দেখে বালিরাজ চমকে উঠল ।
আয় লাত্থি মারে !
যায় লাত্থি মারে !
এই কান্ড দেখে বালিরাজ গেল খাবারের কথা ভুলে ।এক দৌড়ে এসে পন্ডিত মশাই এর পায়ের কাছে চলে এলো হাপাতে হাপাতে। পন্ডিত বললঃ কিরে,বালিরাজ বাপু খাবার কই ?বালিরাজ হাপাতে হাপাতে খুলিটির কথা পন্ডিতকে খুলে বলল । শুনে পন্ডিত বললঃ ও তাই এই কথা ! তবে শোন বাপু সে কাহিনী। পাগলাপুরে ছিল এক রাজা। বাল সস্কর ,ধন দৌলতের তার অভাব ছিল না। তার ছিল একটি মাত্র মেয়ে। মেয়েকে পড়ানোর জন্য রাজা এক মাস্টার রেখে দিলেন। মেয়ে মাস্টারের কাছে যায় আর আসে। এইভাবে কয়েক মাস কেটে গেল। একদিন মাস্টার সাহেব পড়ার কথায় বললেনঃ আল্লাহ যারে দিছে বিদ্যা , তার বিদ্যা দিমু কিদ্দা ?
এই কথায় রাজকুমারী শুনে গেলেন হড়কে। লেখাপড়া দিলেন ছেড়ে। সকলে অনেক চেষ্টা করল পড়াতে, কিন্তু তার এক কথা ‘বিদ্যা পামু আল্লাহর তরে। শুনে রাজা গেলেন রেগে । সেই দেশে ছিল এক মেয়ে সওদাগর। সে আজ তার জাহাজ সওদার উদ্দেশ্যে ভাসাবে। তাই রাজার অনুমতি নিতে আসল । রাজা ভাবলেন এই উত্তম সময় । এ কুলাঙ্গার মুর্খ মেয়ে রেখে বদনাম করে লাভ নাই। মেয়ে সওদাগরকে হুকুম দিয়ে বললেনঃ এই মুর্খ মেয়ে কে তোমার সাথে নিয়া যাও এবং একে সমুদ্রে বাক্সবন্দি করে ফেলে দিও। এরপর রাজার মেয়েকে নিয়ে মেয়ে সওদাগর জাহাজ ছেড়ে দিল। এইদিকে রাণী খবর পেয়ে তো কেঁদে হয়রান।
পশু কাঁদে পাখি কাঁদে,
কাঁদে গাঙের ঢেউ,
রাজকুমারী যায়রে মর,
রুখলনা রে কেউ !
একদিন দুইদিন করে কেটে যায় সাতদিন। জাহাজ তখনে সমুদ্রের মাঝে। রাজকুমারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়ে সওদাগর দিল তাকে সমুদ্রে ফেলে। পানিতে পড়েই রাজকুমারীর ঘুম গেল ভেঙ।প্রানপনে চেষ্টা করতে লাগল সমুদ্যে ভেসে থাকার জন্য। ততোখনে জাহাজ পেরিয়ে যায়, বহু দুর দুরান্তে । রাজকুমারী তখন প্রায় বেহুস। ঠিক সেইসময় গেলো ঐ সাগরে চর জেগে ।
আর তাতে ঠাঁই নিয়ে রাজকুমারী পেলেন রক্ষা। দয়ার সাগর দয়াল আল্লাহ- এই অকুল সাগরের কেরামতে চর জাগাইয়া -বাচাইলা আমারে। পরে রাজকুমারী চরে বাচার তাগিতে খাদ্যের খোঁজে লেগে গেলে । দেখতে দেখতে সুর্য ডুবে গেল। দেখা দিল চাঁদ। এমন সময় রাজকুমারী দেখতে পেলেন চরের ঠিক মাঝখানে একটা অদ্ভুত গাছ। সেই গাছের ঝাকরা পাতার নিচে গিয়ে গাছের ফল গেয়ে রাজকুমারী বসলেন বিশ্রাম নিতে ।
তখনে ঘুমের মধ্যে রাত দুই প্রহর নাগাত কেটে গেল। কি জানি কথার আওয়াজে রাজকুমারীর ঘুম ভেঙ্গে গেলো । চমকে উঠে দেখেন গাছের মধ্যে দুটো পাখি। একটার নামঃ শুক আর একটার নাম দুখ। দুখ বলছেঃ শুক এই বিজন চরে মানুষ আসল কিভাবে ? শুক বলছেঃ শুন দুখ তোমায় বিস্তারিত বলছি। এই হচ্ছে এক রাজকুমারী। ভাগ্যের কারণে আল্লাহর উছিলায় ও নিয়েছে বনবাস। তবে ও রাজকুমারী যদি আল্লাহর নাম নিয়া এই গাছের পাতা ভক্ষন করে তবে খুব শীঘ্রই সে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে । তবে !! দুখ বললঃ তবে কি ?
শুক বললঃ তবে ভাগ্য গননা যদি ভুল না হয় রাজকুমারীর আরেকটা ফারা আছে । সেটা আমার জানা নাই । এই কথা বলে পাখি দুটো গাছ থেকে উড়ে চলে গেল ।রাজকুমারীও বিশ্বাসী মনে গাছের পাতা খেতে শুরু করল। আল্লহরে ডাকিয়া রাজকুমারী -কিনা কাম করে। উত্তরের পাতারে খাইল -রাত দুইফর ধরে। তিন পহরের কালে রাজকুমারী -কি কাম করিল -পশ্চিমের ডালের পাতা ছিড়িয়া খাইল -প্রভাতের শুকতারা যখনে উঠিল । দক্ষিনের পাতারে রাজকুমারী খেয়ে শেষ করিল। কালি আন্ধার গিয়া যখন -দল পহর আসিল। আল্লাহরে ভাবিয়া রাজকুমারী -পুবের পাতা খাইল। রাত ততোখনে শেষ , তখন গাছের পাতাও শেষ ,রাজকুমারীর ক্ষুদা তৃষ্ণা , ক্লান্তিও শেষ । সেখান থেকে এসে দেখেন এক অবাক কান্ড । মাঠের মাঝে একটা বাড়ি । সোনালী সে বাড়ি খালি, ঝিকিমিকি করে -রাজকুমারী এসে সেথায় আস্তানা গাড়ে ।
রাজকুমারী সোনার ঘরে থাকে আর আল্লাহর উপাসনা করে আর সায়রের দিকে তাকিয়ে নানা কথা ভাবে । এইভাবে দিন, সপ্তাহ মাস পেরিয়ে বছর আসে । হঠাত একদিন রাজকুমারী দেখে নদীতে এক ভেলা । ভেলার মসারী টেনে দেখেঃ সোনার বরণ রাজকুমার ওরে -মশারীর ভেতরে রাহুতে গিড়িল যে চাঁন -পালায় মেঘের আড়ে । সাপের ছোবল দাগ রাজকুমারের পায়ে বিধে আছে -চিঠি একখানে পাশে পড়ে -রাজকুমার আছে ।
রাজকুমারী লেগে গেলেন সেবার। কাসবন , রোদ্দর পেরিয়ে আসে বর্ষার ঢালি । রাজকুমার আর রাজকুমারী দিব্বি আছে এখন । একদিন । সেই যে মেয়ে সওদাগর গিয়েছিল বানিজ্যে। সে ফিরছিল ঠিক এই পথে। এসে দেখে অবাক কান্ড। সমুদ্রের মাঝে এক চর আর তাতে এক অপরুপ রাজকুমার। রাজকুমারীকে দেখে সে গেল আরও চমকে। জাহাজ ভারে মেয়ে সওদাগর নামলেন চরে। তাকে দেখে রাজকুমারী এলো ছুটে । ঠিক হল সোনার ঘরটার বিনিময়ে মেয়ে সওদাগর তাদের দেশে ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু মেয়ে সওদাগরের মনে জাগল বদ মতলব।
গভির রাতে রাজকুমারী আর রাজকুমার যখন ঘুমে বিভোর তখন সে কি করল, রাজকুমারীকে বেঁধে দিল সমুদ্রে ফেলে। ঘুমের মধ্যে রাজকুমারী পড়িল সমুদ্রে -কান্দিত লাগিল মুখে আল্লাহ আল্লাহ করে। জাহাজের মধ্যে রাজকুমার ঘুম ভাঙতেই সেও শুরু করল কান্না। সে কান্নায় এলো ঝড়। তছনছ অবস্থা। এদিকে রাজকুমারী একটা কাঠ পেয়ে তাতে ঝাপটে ধরে ভেসে রইল। ওদিকে রাজকুমার ও জাহাজের একটা খোল ধরে ভেসে রইল। ধলপ্রহরের সময় তাদের হল দেখা। আর এদিকে মেয়ে সওদাগর ঝাপটে ঝাপটে একটা চরে উঠতেই ধরল তাকে বাঘে । সবখেয়ে মাথাটা রেখে চলে গেল সেই বাঘ। আর কোন এক বনিক সে চরে নেমে মাথাটাকে নিয়ে এসেছিল এই বাজারে। সেই থেকে এই মাথার খুলি -আইতে খায় লাত্থি। যাইতে খায় লাত্থি।
আরও মজার গল্প দেকুন ।